পদ্মা সেতুতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে টুস করে নদীতে ফেলে দিতে এবং নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসকে পদ্মা নদীতে চুবিয়ে ব্রীজে উঠিয়ে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ফ্যাসিবাদি সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তাঁর ৪১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এই বেফাস মন্তব্য করেন।
১৭ মে (মঙ্গলবার) ছিল ইন্ডিয়া থেকে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এই দিবস উপলক্ষে বুধবার (১৮ মে) গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এই আলোচনা সভায় সরকারের নেয়া মেঘা প্রকল্প গুলোর সমালোচনাকারী অর্থনীতিবিদদের অর্বাচিন বলে আখ্যায়িত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বড় বড় অর্থনীতিবিদ, ‘জ্ঞানী-গুণী এই ধরনের অর্বাচীনের মতো কথা বলেন কীভাবে? মেগা প্রজেক্টগুলো করে নাকি খুব ভুল করছি। তারা আয়েশে বসে থাকে আর আমার তৈরি করা সব টেলিভিশনে গিয়ে কথা বলে।’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সমালোচনা হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এত টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট করে কী হবে এ প্রশ্নও কিন্তু তুলেছে তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করলে তাদের গায়ে লাগে।
পদ্মাসেতু নির্মানে বিশ্ব ব্যাংকের ঋন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, সে (ড.ইউনূস) আর মাহ্ফুজ আনাম আমেরিকায় যায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারি ক্লিনটনকে ই-মেইল করেছে। মি. জোয়েলিক সে সময় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর শেষ কর্মদিবসে, কোনো বোর্ডসভায় ছাড়াই পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেন।’
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাঁকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে। উপদেষ্টা হিসেবে থাকা আরও উচ্চ মানের। তার এমডিই থাকতে হবে। সেটা সে ছাড়বে না। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।’ বিষয়টি নিয়ে ইউনূস মামলা করেছিলেন জানিয়ে হাসিনা বলেন, ‘কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো ১০ বছর কমিয়ে দিতে পারবে না। কারণ, গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি পদে থাকতে পারবে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। বয়সটা কমাবে কীভাবে? সে মামলায় হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসা নেয়।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। সেতুতে যে স্প্যানগুলো বসাচ্ছে, এগুলো তার কাছে ছিল জোড়াতালি দেওয়া। বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে। আবার তার সঙ্গে কিছু দোসরেরাও একই কথা বলেছিল। তাদেরকে এখন কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য মিথ্যা কথা বলা এবং বেফাস মন্তব্যের জন্য রাজনীতিতে শেখ হাসিনার জুড়ি নেই। হরহামেশাই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্নজন সম্পর্কে এরকম তুচ্ছ্য তাচ্ছিল্য এবং বেফাস মন্তব্য করে থাকেন।
যেমন,২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথবাহিনীর আক্রমনে রীতিমত যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল। সেখানে গণহত্যা হয়েছিল বলে বিদেশী গণমাধ্যম গুলোতে সংবাদও প্রচার হয়েছিল। অথচ, জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, হেফাজতের সমাবেশ পণ্ড করতে একটা গুলিও ফুটাতে হয়নি। হেফাজত কর্মীরা রাতে লাল রং মেখে রাস্তায় শুয়ে ছিলেন এবং পুলিশ গেলে লাশ উঠে দৌড় দিয়েছিল বলে শেখ হাসিনা তখন হাসতে হাসতে বলেছিলেন! শেখ হাসিনার মুখে এরকম ডাহা মিথ্যা ও বেফাঁস কথা বলার অসংখ্য নজির রয়েছে। সর্বশেষ নজির তৈরি করলেন বুধবার তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায়।
উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয় ছেড়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এর ১৩ দিন পরই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে হত্যা করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমানকে হত্যার দিনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলেও তখন খবর বের হয়েছিল।
Leave a Reply